শিশুর : স্ট্রেঞ্জার এংজাইটি

প্রসঙ্গ :স্ট্রেঞ্জার এংজাইটি ।

বাসায় আত্মীয় স্বজন/নতুন কেউ আসলে বাচ্চা ভয় পায়, দোষ হয় মায়ের।কেউ না কেউ মুখ ভার করে বলে বসেন,”বাচ্চাকে কোথাও নিয়ে যাও না, এমনই তো হবে!”

আসলেই কি তাই?
প্রতিটি বাচ্চা জীবনের শুরু থেকে বৃদ্ধি ও বিকাশের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে যায়।এগুলোকে বলা হয় ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোন। এর মধ্যে কিছু কিছু সাধারণ মানুষরাও জানে,প্রাকটিস করে।যেমন দেড় মাসে হাসবে,তিন মাসে ঘাড় শক্ত হবে,উপুড় হবে,ছয় মাসে বসতে শিখবে, আট মাসে দাঁড়াবে, এক বছর বয়সে টলমল করে হাঁটবে,দেড় বছরে ভালোভাবে হাঁটবে ইত্যাদি। কিন্তু এছাড়াও আরো কিছু মাইলস্টোন আছে যা সাধারণ মানুষের এতো পরিচিত নয়,স্ট্রেঞ্জার এংজাইটি সেগুলোরই একটা।

কখন শুরু হবে?
সাধারণত ছয় মাস।চার মাসেও দেখা যেতে পারে।চার মাসের আগে দেখা যায়নি।

কীভাবে বোঝা যাবে?
নতুন কাউকে দেখলে গম্ভীর হয়ে যাওয়া(লাজুক শিশু) কান্না করা,বাবা,মা বা প্রাইমারি কেয়ার গিভারকে আঁকড়ে ধরা ইত্যাদি।

এটা নিয়ে ভয়ের কিছু আছে কী?
সাধারণ স্ট্রেঞ্জার এংজাইটি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।কিছু কিছু বাচ্চা স্ট্রেঞ্জার টেরর নিয়ে প্রেজেন্ট করে(কাঁদতে কাঁদতে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে উল্টে যাওয়া,কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে বমি করে দেওয়া,ঘণ্টাব্যাপী কান্না করা)তাদের জন্য কিছু প্রাকপ্রস্তুতি নেওয়া দরকার, যেমন অতিথিদের আগে থেকেই বলে রাখা যেন তারা আহত না হয়,নতুন বেবি সিটার বা ডে কেয়ার সেন্টারে বাচ্চা রেখে চলে যাওয়ার আগে তাকে অভ্যাস করার সময় দেওয়া ইত্যাদি। স্ট্রেঞ্জার এংজাইটি কি সব বাচ্চার হবে?
না।এটা শুধু স্ট্রেঞ্জার এংজাইটি না,সব ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সব বাচ্চা সব মাইলস্টোন অতিক্রম করে না,অনেকেই বাইপাস করে।অর্থাৎ বিকাশের পরবর্তী ধাপে চলে যায়।

এর বয়সসীমা কতো?
চার মাস থেকে দুই বছর। ছয় মাস থেকে দেড় বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

আমাদের করনীয় কিছু আছে কি?
প্রথমত, বাচ্চার উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে না।তাকে নতুন পরিবেশ বা মানুষ এর সাথে অভ্যস্ত হতে সময় দিতে হবে।অতিথির মন রক্ষা করতে জোর করে কোলে দিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বাচ্চাকে নতুন নতুন জায়গা এবং মানুষ এর সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
তৃতীয়ত, নতুন কেউ আসার আগে জানিয়ে দিতে হবে সরাসরি চোখের দিকে না তাকাতে এবং কোলে নেওয়ার জন্য হাত না বাড়াতে।
চতুর্থ, বাবা মা নতুন মানুষটির সাথে হাসিমুখে কথা বললে বাচ্চার বিশ্বাস অর্জন সহজ হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, বাবা বা মা বাচ্চাকে হাতে জড়িয়ে রেখে নতুন কারো সাথে পরিচয় করাবেন, বাচ্চার থেকে দূরে গিয়ে না। আরো কিছু বলা হয়েছে,যেমন নতুন জায়গায় যাওয়ার সময় বাচ্চার সবচেয়ে প্রিয় পুতুল বা কোলবালিশ নেওয়া যেতে পারে তাকে কম্ফর্ট আর হোমলি ফিল করানোর জন্য।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদি দুই বছর বয়সের পরেও এই এংজাইটি থেকে যায়,অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাবেন।


ডঃ মৌলী আখন্দ
মেডিক্যাল অফিসার
নবজাতক ও শিশু নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট
ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটাল

Related posts

Leave a Comment